অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাহরাইনে দুই হাজারেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে এবং আলে খলিফা সরকারের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
বাহরাইনে স্বৈরসরকারের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া গণআন্দোলন গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৩তম বছরে গিয়ে পড়ল। সৌদি আরব ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের সরাসরি সহায়তায় আলে খলিফা সরকার গত ১২ বছর ধরে দেশটির জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ কঠোরভাবে দমন করে আসছে। সৌদি সমর্থনপুষ্ট বাহরাইনের নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা ও নির্যাতনে এ পর্যন্ত ২০০ এরও বেশি বাহরাইনের নাগরিক শহীদ এবং আরো হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। এ ছাড়া, ২০ হাজারের বেশি আন্দোলনকারী বিনাবিচারে জেলখানায় আটক রয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমানে পাঁচ হাজার রাজনৈতিক বন্দী বিভিন্ন জেলখানায় আটক রয়েছে যাদের মধ্যে দুই হাজারের বেশি বন্দীর অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং তারা মানবেতর দিনাতিপাত করছে। বাহরাইনের মানবাধিকার কর্মী ইবতেসাম আল সায়েগ বলেছেন, দুই হাজারের বেশি রাজনৈতিক বন্দীর অবস্থা খুবই খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে।
বাহরাইনের জেলখানাগুলোতে অনেক বছর ধরে রাজনৈতিক বন্দী আটক থাকলেও তাদের ব্যাপারে আদালত এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বা বিচার হয়নি। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেশের নিরাপত্তা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হলেও এখন পর্যন্ত সরকার তাদের দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। এমনকি আল খলিফা সরকার রাজনৈতিক বন্দীদের প্রাথমিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করছে এবং নানাভাবে তাদের অপমান অপদস্থ করে তাদের মানবিয় অধিকারকে অস্বীকার করছে। মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব বন্দীরা অযত্ন অবহেলায় জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছর মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার সেখানে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে এবং জনগণের অধিকার বলতে কিছু নেই, বন্দীদেরকে প্রাথমিক অধিকার টুকুও দেয়া হচ্ছে না।
বাহরাইনের জেলখানায় আটক বন্দীদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুও রয়েছে। ফলে এসব শিশু লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিশুদের আটক করার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের পরিবারে আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং তারা যেন সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ না নেয় সেজন্য চাপ সৃষ্টি করা। শিশুদের অবস্থা সম্পর্কে বাহরাইনের মানবাধিকার কর্মী ইবতেসাম আল সায়েগ বলেছেন, কোমলমতি শিশুরা শরীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে এবং তারা বলছে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের সাথে খুবই হিংস্র আচরণ করছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রাজনৈতিক বন্দীদের অন্তত ২৬ জনকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে এমন সময় ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে যখন অভিযোগ রয়েছে নির্যাতন চালিয়ে জোর করে তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে যা কিনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনেরও বরখেলাফ।
বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বাহরাইনের জনগণের ওপর সরকার সীমাহীন নির্যাতন চালালেও মানবাধিকারের দাবিদার পাশ্চাত্যের সরকারগুলো এ ব্যাপারে টুঁশব্দটিও করছে না। ফলে গণআন্দোলন দমনে সরকার আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।#
Leave a Reply